জৈন ধর্ম − মহাবীর এবং বাকি জৈন তীর্থঙ্করদের নাম এবং তাদের চিহ্নের তালিকা পিডিএফ
◉ জৈন ধর্মের উদ্ভব :
জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম প্রায় সমসাময়িক। মহাবীরকে জৈনধর্মের প্রবর্তক বলে মনে করা হলেও, জৈনরা মনে করেন যে, তার আগেও তেইশজন তীর্থংকর অর্থাৎ মুক্তির পথপ্রদর্শক জৈনধর্মকে পুষ্ট করেছিলেন। সর্বপ্রথম তীর্থংকর ছিলেন ঋষভদেব বা আদিনাথ এবং সর্বশেষ তীর্থংকর হলেন মহাবীর। এই চব্বিশজন তীর্থংকরের মধ্যে বাইশ জনের কোনও ঐতিহাসিক সন্ধান পাওয়া যায় না। ত্রয়ােবিংশ তীর্থংকর পার্শ্বনাথ বা পরেশনাথ সম্বন্ধে জৈন ধর্মগ্রন্থে কিছু সংবাদ পাওয়া যায়।❍ পার্শ্বনাথ : পার্শ্বনাথই প্রকৃতপক্ষে জৈনধর্মের সূচনা করেন। তার সম্বন্ধে এটুকু জানা যায় যে, তিনি কাশীর কোনও রাজার সন্তান ছিলেন এবং মহাবীরের জন্মের প্রায় আড়াইশাে বছর আগে তাঁর জন্ম হয়। ত্রিশ বছর বয়সে পার্শ্বনাথ রাজপ্রাসাদের ভােগ-বিলাস পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন এবং তিন মাস কঠোর তপস্যার পর পূর্ণজ্ঞান লাভ করেন। তিনি ধর্ম সম্বন্ধে যে উপদেশ প্রচার করেন তা চতুর্যাম নামে খ্যাত।
❍ মহাবীর : জৈনধর্মের শেষ তীর্থংকর ছিলেন মহাবীর। তিনি পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত ধর্মের সংস্কার করেছিলেন মাত্র। তার মুখ্য ভূমিকা ছিল সংস্কারকের। পার্শ্বনাথ প্রচারিত চতুর্যাম আদর্শের সঙ্গে মহাবীর আরও একটি আদর্শ যােগ করেন এবং তা হল শুচিতা বা ব্ৰত্মচর্য। ৩০ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে দীর্ঘ ১২ বছর কঠোর সাধনার পর তিনি কৈবল্য বা সিদ্ধিলাভ করেন এবং জিন বা জিতেন্দ্রিয় নামে পরিচিত হন।
আনুমানিক ৫৪০ খ্রিস্টপূর্বে বিহারের মজঃফরপুর জেলায় মহাবীরের জন্ম হয়। ছােট বেলায় তাঁর নাম ছিল বর্ধমান। কৈবল্য ও পরম জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি সুখ-দুঃখ ও পঞ্চ রিপুকে জয় করেছিলেন বলে তাঁকে মহাবীর বলা হয় এবং জিন থেকে তাঁর অনুগামী এবং শিষ্যরা জৈন নামে পরিচিত হন।
কৈবল্য লাভ করার পর তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মগধ, কোশল, অঙ্গ, মিথিলা, নালন্দা, বৈশালী, রাজগৃহ প্রভৃতি স্থানে ধর্মপ্রচার করে বহু নরনারীকে জৈন ধর্মে দীক্ষিত করেন। তৎকালীন রাজারাও তাঁকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন। ৪৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৭২ বছর বয়সে রাজগীরের নিকটবতী পাবা নামক স্থানে তিনি অনশনে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন।
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে পাটলিপুত্রে আহ্বান করা জৈনদের এক সভায় মহারীরের উপদেশগুলি বারােটি অঙ্গে বা খণ্ডে সংকলিত করা হয়, যা ‘দ্বাদশ অঙ্গ’ নামে খ্যাত। দ্বাদশ অঙ্গ প্রাকৃত ভাষায় লেখা।
❍ জৈনধর্মের মূল শিক্ষা : পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত চতুর্যাম নীতি [যথা (১) অহিংসা (২)সত্য (৩) অচৌর্য (চুরি না করা) ও (৪) অপরিগ্রহ (বিষয় সম্পত্তি থেকে মুক্ত থাকা) এবং মহাবীর প্রবর্তিত ব্ৰত্মচর্য মােট এই পাঁচটি নীতি বা ‘পঞ্চ মহাব্রত’ হল জৈনধর্মের মূলভিত্তি। জৈনধর্মের মতে, সত্য বিশ্বাস, সত্য জ্ঞান এবং সত্য আচরণ—এই তিনটি গুণ হল মানুষের ত্রিরত্ন। এই তিনটি গুণ বা ত্রিরত্নের সাহায্যে পরম শুদ্ধ আনন্দ বা আত্মার মুক্তি অর্থাৎ সিদ্ধশিলা লাভ করা যায়। জৈনধর্মে বেদের অভ্রান্ততা, যাগযজ্ঞের কার্যকরীতা বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না।তবে এই ধর্ম হিন্দুদের মতাে কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। কৃচ্ছসাধনকেই জৈনরা শাশ্বত সত্যকে জানার একমাত্র উপায় বলে মনে করেন। জৈনধর্মমতে বিশ্বাস করা হয় যে, ‘পঞ্চমহাব্রত’ পালন ও কৃচ্ছসাধনের দ্বারাই কর্ম ও জন্মান্তরের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জৈনধর্মে সামান্যতম কীট হত্যাকেও মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়।
❍ ২৪ জন জৈন তীর্থঙ্করের নাম এবং চিহ্নের তালিকা
নং | তীর্থঙ্করের নাম | চিহ্ন |
---|---|---|
০১ | ঋষভনাথ (আদিনাথ) | ষাঁড় |
০২ | অজিতনাথ | হাতি |
০৩ | সম্ভবনাথ | ঘোড়া |
০৪ | অভিনন্দননাথ | বাঁদর |
০৫ | সুমতিনাথ | হাঁস |
০৬ | পদ্মপ্রভ | লাল পদ্ম |
০৭ | সুপার্শ্বনাথ | স্বস্তিকা |
০৮ | চন্দ্রপ্রভ | অর্ধচন্দ্র |
০৯ | শীতলনাথ | কুমির বা মকর |
১০ | পুষ্পদন্ত | শ্রীবৎস |
১১ | শ্রেয়াংশনাথ | গণ্ডার |
১২ | বসুপূজ্য | মহিষ |
১৩ | বিমলনাথ | বন্য শুকর |
১৪ | অনন্তনাথ | বাজপাখি |
১৫ | ধর্মনাথ | বজ্র |
১৬ | শান্তিনাথ | হরিণ |
১৭ | কুন্ঠুনাথ | ছাগল |
১৮ | অরনাথ | মাছ |
১৯ | মাল্লীনাথ | কলশ |
২০ | মুনিসুব্রত | কচ্ছপ |
২১ | নমিনাথ | নীলপদ্ম |
২২ | নেমিনাথ | শঙ্খ |
২৩ | পার্শ্বনাথ | সাপ |
২৪ | মহাবীর | সিংহ |
নিচের থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করুন
No comments:
Post a Comment
Don't Leave any spam link.