Breaking

Jun 8, 2020

Theory of Evolution by Lamarck and Darwin in bengali || অভিব্যাক্তির মতবাদ বিস্তারিত (ডারউইন এবং ল্যামার্ক)

Theory of Evolution by Lamarck and Darwin in bengali -অভিব্যাক্তির মতবাদ বিস্তারিত (ডারউইন এবং ল্যামার্ক)
Theory of Evolution
Theory of Evolution

অভিব্যক্তির মতবাদ (Theory of Evolution) :


ল্যামার্কের মতবাদ বা ল্যামার্কবাদ (Theory of Lamarck or Lamarckism) :

ফরাসি বিজ্ঞানী জাঁ ব্যাপটিস্ট দ্য মনেট ল্যামার্ক (Jean Baptist de Monet Lamarck 1744 -1829) 1809 খ্রিস্টাব্দে ফিলােজফি জুওলজিক (Philosophie Zoologique) নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম অভিব্যক্তি সংক্রান্ত মতবাদ প্রকাশ করেন। ল্যামার্কের মতবাদকে ল্যামার্কবাদ (Lamarckism) বলা হয়।ল্যামার্কের মতবাদ নিম্নলিখিত তত্ত্বগুলির উপর প্রতিষ্ঠিত।

1. পরিবেশের প্রভাব (Influence of the
Environment) : ল্যামার্কের মতে জীবদেহের গঠনগত পরিবর্তনে পরিবেশের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ, পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে জীবের স্বভাব ও দেহেরও পরিবর্তন ঘটে।পরিবেশের পরিবর্তন মাটি, খাদ্য ও তাপমাত্রার উপর প্রভাব ফেলে এবং সেই কারণেই প্রাণীরা একস্থান থেকে অন্যস্থানে অভিযান করে।

ল্যামার্ক




2. অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র (Law of use and disuse of organs) :
পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার উদ্দেশ্যে জীবদেহের কোনাে কোনাে অঙ্গের বেশি মাত্রায় ব্যবহার ঘটে, আবার কোনাে কোনাে অঙ্গের ব্যবহার কমে যায়।ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে নির্দিষ্ট অঙ্গ বা অঙ্গগুলি সবল ও  সুগঠিতহয়, অপরপক্ষে ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে অব্যবহৃত অঙ্গগুলি দুর্বল ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কালক্রমে অবলুপ্ত হয়।

হাঁসের লিপ্তপদ


     উদাহরণ স্বরূপ : 
(i) স্থলচর পাখি খাদ্যের খোঁজে জলে যাওয়ার পর ক্রমাগত সাঁতার কাটার ফলে পায়ের আঙুলগুলির অন্তর্বর্তী স্থানে পাতলা চামড়া সংযুক্ত হয়ে লিপ্তপদে পরিণত হয়েছে। 
(ii) ল্যামার্কের মতে, হরিণ জাতীয় প্রাণী থেকে জিরাফের আবির্ভাব ঘটেছে, উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার জন্য গলা ও সামনের পা প্রতি প্রজন্মে একটু একটু করে লম্বা হয়ে বর্তমানকালের লম্বা গলা ও পা বিশিষ্ট জিরাফের আর্বিভাব হয়েছে।

ল্যামার্কের তত্ত্বানুসারে জিরাফের গ্রীবা দীর্ঘ হওয়ার ক্রমবিকাশ



(iii)সাপের পূর্বপুরুষের গিরগিটির মতাে চারটি পা ছিল, কিন্তু ভূগর্ভ অভিযােজনের জন্য ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে বর্তমান সাপের পা সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত হয়েছে। 
(iv)পূর্বপূরুষের সক্রিয় ডানা ছিল এবং আকাশে উড়তে পারত, কিন্তু বংশানুক্রমে ডানার ব্যবহার করার ফলে এখন লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।

3. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার সূত্র (Law of inheritance of acquired characters) : পরিবেশের প্রভাবে জীবের জীবনকালে যে সব বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয় তা পরবর্তী প্রজন্মের জীবে সঞ্চারিত হয়। এইভাবে প্রতি প্রজন্মে অর্জিত সামান্য মাত্রার পরিবর্তন পরবর্তী প্রজন্মে জমা হতে হতে কালক্রমে তা একটি বড়-সড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা দেয়।এইভাবে জীবের বিবর্তন ঘটে।

4. নতুন প্রজাতির উৎপত্তি (Origin of new species) : ল্যামার্কের তত্ত্ব অনুযায়ী অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরনের ফলে এবং প্রতিটি জনুতে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে একটি প্রজাতি থেকে আর একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়।


ডারউইনের মতবাদ বা ডারউইনবাদ (Theory of Darwin or Darwinism)

ডারউইন


                    চার্লস ডারউইন 
(Charles Darwin 1809-1882) : 
ইংল্যান্ডের স্ৰায়বেরি (Shrewsbury) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। 1831-1835 সালে তিনি HMS Beagle নামক জাহাজে প্রকৃতিবিদ হিসাবে আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন এবং পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীকালে তার প্রমণকালীন অভিজ্ঞতা এবং নমুনাগুলির উপর পর্যবেক্ষণ নির্ভর করে তিনি জীবের অভিব্যক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট যুগান্তকারী মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতবাদকে ডারউইনবাদ বা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ (Natural Selection Theory) বলা হয়। 1859 খ্রিস্টাব্দে ডারউইন "Origin of Species by Means of Natural Selection” নামক গ্রন্থে তাঁর মতবাদকে প্রকাশ করেন।

ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা (Explanation of Darwinism) : ডারউইন তাঁর মতবাদকে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন
1. অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি (Prodigality of Production) : ডারউইনের মতে অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এর ফলে জ্যামিতিক ও  গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে, উদাহরণস্বরূপ—একটি স্ত্রী সালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় ৩ কোটি ডিম পাড়ে, একটি ঝিনুক একবারে প্রায় 12 কোটি ডিম্বাণু উৎপাদন করে। ডারউইনের মতে এক জোড়া হাতি থেকে উৎপন্ন সকল হাতি বেঁচে থাকলে 750 বছরে হাতির সংখ্যা হবে এক কোটি নব্বই লক্ষ। উল্লেখযােগ্য যে, হাতি 12 বছরে একটি সন্তান প্রসব করে।


2. সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান (Constancy of food and shelter) :  ভূ-পৃষ্ঠের আয়তন সীমাবদ্ধ হওয়ায় জীবের বাসস্থান ও খাদ্যও সীমিত।


3. অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম (Struggle for existance) : জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায় এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় জীবকে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন প্রতিযােগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়, ডারউইন যাকে “অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম” আখ্যা দিয়েছেন। জীবন সংগ্রাম চলে প্রধানত দু’ভাবে, যথা—(i) অন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম (interspecific struggle), অর্থাৎ বিভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে সংগ্রাম এবং (ii) আন্তঃপ্রজাতিক সংগ্রাম (interspecific struggle), অর্থাৎ বিভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে সংগ্রাম। এছাড়া জীবদের খরা, বন্যা প্রভৃতি পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়, একে প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম বলে।

4. ভেদ বা প্রকরণ (Variation) : ডারউইনের মতে পৃথিবীতে দুটি জীব কখনােই অবিকল একই রকমের হতে পারে না ; অর্থাৎ দুটি জীবের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য বা ভেদ থাকবেই। এমন কি একই পিতামাতার দুটি সন্তানের মধ্যেও কিছু না কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ডারউইন মনে করতেন যে, অবিরত ত্রিবিধ সংগ্রামের ফলে জীবদেহে প্রকরণ বা ভেদ স্পষ্ট হয়, যা প্রজননকালে অপত্যের দেহে সঞ্চারিত হয়ে থাকে এবং পরিশেষে জীবের বৈশিষ্ট্যরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। ডারউইনের ধারণা অনুযায়ী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারাবাহিক পরিবর্তনই ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি উদ্ভবের জন্য দায়ী।

5. যোগ্যতমের উদবর্তন (Survival of the fittest) : ডারউইনের মতে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত জীবগুলির মধ্যে যাদের দেহে ছােটো ছােটো সহায়ক অভিযােজনমূলক বৈশিষ্ট্য এসে যায় তারাই জীবন সংগ্রামে জয়ী হয় এবং বেঁচে থাকার অধিকারী হয়, অন্যরা কালক্রমে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। জীবন সংগ্রামে এই উত্তরণকে যােগ্যতমের উদবর্তন বলা হয়।

6. প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural selection) : ডারউইন তত্ত্বের এই প্রতিপাদ্যটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, “যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ বা অভিযােজনমূলক সমন্বিত জীবেরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযােগিতায় অধিক সুযােগ-সুবিধা ভােগ করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে”। অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হলে অধিক সংখ্যায় বেঁচে থাকে এবং অধিক হারে বংশবিস্তার করে ; অপরপক্ষে প্রতিকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হয় না বলে পরাজিত সৈনিকের মতাে ধীরে ধীরে অবলুপ্ত
হয়।

7. নতুন প্রজাতির উৎপত্তি (Origin of new species) : একটি বিশেষ জীবগােষ্ঠীর মধ্যে অনুকূল প্রকরণগুলি পুঞ্জীভূত হওয়ায় উদবংশীয় জীব ও উত্তরপুরুষের মধ্যে বৈসাদৃশ্য অনেক বেশি হয় এবং কালক্রমে একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়। বিবর্তনের ফলস্বরূপ। জীবজগতে নতুন প্রজাতির জন্ম হয়। ডারউইনবাদ অনুসারে জিরাফের দীর্ঘ গ্রীবার অভিব্যক্তি ল্যামার্কবাদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ডারউইনবাদ অনুসারে উদবংশীয় জিরাফের দলে বিভিন্ন গ্রীবা-দৈর্ঘ সমন্বিত জিরাফ বর্তমান ছিল। উঁচু ডালের পাতার নাগাল পাওয়ার জন্য দীর্ঘতম গ্রীবার উদবংশীয় জিরাফই প্রাকৃতিক নির্বাচনের আনুকুল্য পায়। দীর্ঘকাল প্রাকৃতিক নির্বাচনের আনুকূল্যে অভিযােজনমূলক বৈশিষ্ট্যটি এক জনু থেকে অপর জনুতে সঞ্চারিত হয় এবং কয়েক জনুর পর সুদীর্ঘ গ্রীবা সমন্বিত জিরাফ দলের আবির্ভাব ঘটে। বর্তমানকালের জিরাফের মধ্যেও গ্রীবা-দৈর্ঘের তারতম্য দেখা যায়, তবুও বর্তমানকালের সমস্ত জিরাফের গ্রীবা সুদীর্ঘ।


অন্য টপিক পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন:
আইসোটোপ, আইসোবার, আইসোটোন ? বিজ্ঞানের কুইজ

No comments:

Post a Comment

Don't Leave any spam link.