Breaking

May 30, 2020

The permanent settlement of Lord Cornwallis in Bengali || ভারতে ব্রিটিশরাজ , লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

The permanent settlement of Lord Cornwallis in Bengali || ভারতে ব্রিটিশরাজ , লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত 


The permanent settlement



    লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

হেস্টিংসের পর লর্ড কর্নওয়ালিস গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন। তিনি ইংল্যান্ডে প্রচলিত জমিদারি প্রথার অনুকরণে ভারতেও সম্প্রদায় সৃষ্টি করার পক্ষপাতী ছিলেন। এছাড়া রাজস্ব ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য তিনি ভারতীয় জমিদারদের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য চুক্তি করেন যা 'দশসালা বন্দোবস্ত’ নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে ভূমিরাজস্ব সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত' ব্যবস্থা প্রচলন করেন।


     লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী ব্যবস্থার শর্তগুলাে ছিল : 


(১) এই প্রথা অনুসারে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদার শ্রেণি বংশানুক্রমিকভাবে জমির মালিকানা ভােগ করবে।

(২) জমিদাররা আদায়ীকৃত রাজস্বের নয়-দশমাংশ ভাগ কোম্পানিকে জমা দেবেন।

(৩) প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও রাজস্বের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকবে। 

(৪) বছরের নির্দিষ্ট দিনের সূর্যাস্তের মধ্যে সরকারি রাজস্ব জমা দিতে না পারলে সেই জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হবে।


       চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন ছিল আধুনিক ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে ভারতের সামাজিক ও আর্থিক গতিধারা পরিচালিত হয়েছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফলগুলােকে

সুফল ও কুফল এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যেমন :


       চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফলগুলি ছিল : 


(১) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কোম্পানির স্থায়ী আয় সুনিশ্চিত হয়, এবং এতদিন পর্যন্ত কোম্পানির রাজস্ব সম্পর্কে যে অনিশ্চয়তা ছিল তার অবসান হয়। এছাড়া 

(২) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সংগৃহীত অর্থ থেকে কোম্পানি তার বাণিজ্যিক বিনিয়ােগের মূলধন সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।

(৩) সামগ্রিকভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ভারতে রাজকীয় অনুগ্রহপুষ্ট একটি নতুন অভিজাত জমিদার শ্রেণি গড়ে ওঠে, যারা সরকারের প্রধান সমর্থক ছিলেন। 

(৪) কৃষির উন্নতি ঘটে, ফলে দেশে কৃষিযােগ্য আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। 

(৫) জমি থেকে সরকারের আয় ক্রমশ বাড়তে থাকে।

(৬) স্থায়ীভাবে জমিদারি লাভ করার ফলে জমিদাররা নানান জনহিতকর সংস্কারমূলক কাজে মনোেযােগী হন।



চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের এইসব সুফল লক্ষ করেই ঐতিহাসিক মার্শম্যান বলেছেন, 'It was a bold, brave and wise measure' 



     চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল: কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলোে ছিল আরও প্রকট,

যেমন : 


(১) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে একদিকে জমিদার রাজস্ব আদায়কারী ও মধ্যস্বত্ব ভােগীরা বিশেষ লাভবান হন, অন্যদিকে কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। 

(২) চিরস্থায়ী ব্যবস্থার ফলে জমিদারি থেকে জমিদারদের আয় বৃদ্ধি পেলেও সরকারি আয় সেই অনুপাতে বাড়েনি। 

(৩) এই ব্যবস্থার ফলে বিনা পরিশ্রমে অপর্যাপ্ত আয়ের অধিকারী হওয়ায় জমিদাররা প্রায়ই 'জমির প্রতি উদাসীন’থেকে শহরের বিলাসব্যসনের মধ্যে জীবন কাটাতেন। এছাড়া তারা নিজেদের ইচ্ছামতাে জমি বিক্রি করে দিতেন, ফলে প্রজাদের অবস্থা অসহায় হয়ে পড়ত।

(৪) তাছাড়া চিরস্থায়ী ব্যবস্থার অন্যতম কুফল হল “পাটনি প্রথার উদ্ভব”। কোনও কোনও জমিদার প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার জন্য নির্দিষ্ট মূল্যের পরিবর্তে জমিদারির অংশ ছােটো ছােটো ভাগে বিভক্ত করে দিতেন, একে “পাটনি”বা পত্তনী ব্যবস্থা বলা হত। পাটনি প্রথার ফলে জমির উৎপাদনের মান আরও হ্রাস পায় এবং নতুন ছােটো মালিকরা প্রজাদের উপর অত্যাচার করতে থাকেন। 


(৫) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে উদ্ভুত অর্থনৈতিক শোষণ আর অত্যাচার এই দুই-এর চাপে কৃষকদের জীবনে হতাশা আর বঞ্চনা নেমে আসে। বাধ্য হয়েই তারা মাঝে মাঝে বিদ্রোহের পথে অগ্রসর হত।

     এইসব সমালােচনা সত্বেও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনেকাংশে সাফল্য লাভ করে। রাজা রামমােহন রায়, মার্শম্যান ও রমেশচন্দ্র মজুমদার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে স্বাগত জানান।




MoreLink
১০০+ ইতিহাসের প্রশ্নোত্তরClick Here
সুলতানী ও মুঘল যুগClick Here

No comments:

Post a Comment

Don't Leave any spam link.